পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর ঐশি বাণী। নিজে এর তিলাওয়াত করা সওয়াবের কাজ, তেমনি এর তিলাওয়াত শ্রবণ করাও সওয়াবের কাজ। মহানবী (সা.) কখনো কখনো সাহাবায়ে কেরামকে দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করাতেন এবং গভীর আগ্রহসহ তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, ‘আমার কাছে কোরআন পাঠ করো।’ আমি বললাম, আমি আপনার কাছে কোরআন পাঠ করব, অথচ আপনার ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৫৬) নিম্নে কোরআনের তিলাওয়াত শোনার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর রহমতপাওয়া যায় : যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মহান আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। যারা মনোযোগসহ কোরআন তিলাওয়াত শোনে তাদের ওপরও রহমত অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগসহ তা শোনো এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪) আল্লাহর প্রশংসা পাওয়া যায় : যারা কোরআনের মজলিসে অংশগ্রহণ করে ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করে ও শোনে, মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের মজলিসে তাদের প্রশংসা করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো সমপ্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদের আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫) হিদায়াতের পথ দেখায় : পবিত্র কোরআন মানুষকে হিদায়াতের পথ দেখায়। কোরআন মানুষের হৃদয়কে যেমন প্রশান্ত করে, তেমনি হৃদয়ের বক্রতা দূর করতেও এর কার্যকরি ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ কোরআন হিদায়াত করে ওই পথের দিকে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ (সরল, সুদৃঢ়) এবং সত্কর্মপরায়ণ মুমিনদের সুসংবাদ দেয় যে তাদের জন্য আছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯)
অন্তরে নূর তৈরি করে : পবিত্র কোরআন মানুষের অন্তরকে শীতল করে। মানুষের অন্তরে হিদায়াতের নূর তৈরি করে। ফলে বান্দা মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করে পাপ থেকে ফিরে আসে, যা তার আখিরাতকেও নূর দ্বারা আলোকিত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—খাঁটি তাওবা। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত। নবী ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদের সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)
ঈমান বৃদ্ধি পায় : পবিত্র কোরআন এমন একটি বরকতময় কিতাব, যার তিলাওয়াত শোনার মাধ্যমে মুমিনের ঈমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারা, আল্লাহর কথা আলোচনা করা হলে যাদের অন্তর প্রকম্পিত হয়। আর যখন তাদের কাছে আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে। আর তারা তাদের রবের ওপর নির্ভর করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৮) সওয়াব পাওয়া যায় : আলেমদের মতে, কোরআন তিলাওয়াত করলে যেমন প্রতি হরফে ১০ নেকি পাওয়া যায়, তেমনি কোরআন তিলাওয়াত শুনলেও নেকি পাওয়া যায়। কেননা সুরা আরাফের ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ কোরআন তিলাওয়াত করা হলে তা মনোযোগসহকারে শোনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং চুপ থাকতে বলেছেন।
রাসুল (সা.)-ও মাঝেমধ্যে সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোরআন শোনার প্রমাণ আছে। তবে রেকর্ডকৃত কোরআন তিলাওয়াত শুনলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতে সওয়াব হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/১০৪)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।